۶ آذر ۱۴۰۳ |۲۴ جمادی‌الاول ۱۴۴۶ | Nov 26, 2024
ইমাম রেযা (আ.)এর শাহাদাত
ইমাম রেযা (আ.)এর শাহাদাত

হাওজা / ইমাম শেষ পর্যন্ত মামুনের কথায় খেলাফতের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করায় মামুন ইমামকে তার ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার হতে বাধ্য করে।

হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ১- সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরন্তন। এই দ্বন্দ্বে নবীবংশের মহান ইমামগণ যুগে যুগে যে কালজয়ী অবদান রেখেছেন, তা আজো জনমনে সত্যের পথাবলম্বনের অনুপ্রেরণা জোগায়। ইমাম রেযা (আ.) এর শাহাদাতের ঘটনাটিও তেমনি একটি অনুপ্রেরণার উৎস। আমরা তাঁর শাহাদাতের নেপথ্য ঘটনাবলী বিশে-ষণের মাধ্যমে সেই সত্যকে উন্মোচন করার চেষ্টা করবো।

আব্বাসীয় শাসকদের মধ্যে বাদশা হারুন এবং মামুনই ছিল সবচে' পরাক্রমশালী এবং দোর্দণ্ড প্রতাপশালী। তারা প্রকাশ্যে আহলে বাইতের ইমামদের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তির কথা বলে বেড়াতেন কিন্তু ভেতরে ভেতরে ইমামদের প্রতি ভীষণ বিদ্বেষী ছিলেন। ইমামদের প্রতি তাঁদের এধরণের আচরণের উদ্দেশ্য ছিল দুটো।

এক, আলাভিদের আন্দোলনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া এবং দুই শিয়া মুসলমানদের মন জয় করা। ইমামদের সাথে সম্পর্ক থাকার প্রমাণ থাকলে তাদের শাসন সকল মুসলমানের কাছে বৈধ বলে গৃহীত হবে-এ ধরণের চিন্তাও ছিল তাদের মনে। কেননা ; মুসলমানরা যদি দেখে যে, হযরত আলীর (আ) পরিবারবর্গের সাথে বাদশাহর সম্পর্ক বা যোগাযোগ রয়েছে, তাহলে তারা আব্বাসীয়দের শাসনকে বৈধ মনে করে খুশি হবে, ফলে তারা আর বিরোধিতা করবে না ।

এরফলে তাদের শাসনকার্য পরিচালনা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ হবে। ইমাম রেযা (আ) শাসকদের এই অভিসন্ধিমূলক রাজনীতি বুঝতে পেরে তাদের বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব একটি কৌশল অবলম্বন করেন। তাঁর ঐ কৌশলটির ফলে একদিকে বাদশা মামুনের উদ্দেশ্যও ব্যর্থ হয়, অপরদিকে মুসলিম বিশ্বের জনগণও প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে পারে। এ সময় নবীবংশের সমর্থকরা প্রচার করতে থাকেন যে, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ইসলামী খেলাফতের প্রকৃত উত্তরাধিকার কেবলমাত্র নবী পরিবারের পবিত্র ইমামগণের ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং তাঁরা ব্যতীত কেউ ঐ পদের যোগ্য নয়।

জনগণের মাঝে এই সত্য প্রচারিত হলে স্বাভাবিকভাবেই তারা বাদশার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠবে-এই আশঙ্কায় মামুন ইমাম রেযাকে (আ) সবসময়ই জনগণের কাছ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। শুধু ইমাম রেযা কেন প্রায় সকল ইমামকেই এভাবে গণবিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্যে উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসকরা তাঁদেরকে কঠোর প্রহরার মধ্যে রাখার ষড়যন্ত্র করে। তারপরও ইমামদের সুকৌশলের কারণে তাঁদের বার্তা জনগণের কাছে ঠিকই পৌঁছে যায়।

শাহাদাতের সিঁড়ি বেয়ে যে ইসলাম জমিয়েছে পাড়ি কালের যাত্রায় আজো তা বিশ্বময় দীপ্তিমান নবীবংশীয় ইমামতের সুদীপ্ত ধারায় আর জনগণের কাছে ইমামগণের বার্তা পৌঁছে যাবার ফলে তারা প্রকৃত সত্য বুঝতে সক্ষম হন এবং নবীবংশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে থাকেন। বিশেষ করে বাদশা মামুনের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ইমাম রেযা যখন দাঁড়িয়ে গেলেন, তখন ইরাকের অধিকাংশ লোক মামুনের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল।

হযরত আলীর (আ) খান্দানের কেউ বাদশাহর বিরুদ্ধে গেলে বাদশাহী যে হারাতে হবে-এই আশঙ্কা মামুনের মধ্যে ছিল। যার ফলে মামুন একটা আপোষনীতির কৌশল গ্রহণ করে। বাদশাহ মামুন ইমামকে খোরাসানে আসার আমন্ত্রণ জানায়। ইমাম প্রথমত রাজি হন নি, কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁকে আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়। বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি বসরা অভিমুখে যাত্রা করেন।

কিন্তু পথিমধ্যে তিনি তাঁর গতিপথ পরিবর্তন করে ইরানের দিকে পাড়ি দেন। যাত্রাপথে তিনি যেখানেই গেছেন জনগণ তাঁকে সাদরে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করে। ইমামও নবীজীর সুন্নত, তাঁর আহলে বাইতের ইমামদের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য এবং ইসলামের সঠিক বিধি-বিধান সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করেন। সেইসাথে তাঁর সফরের উদ্দেশ্য অর্থাৎ বাদশাহর আমন্ত্রণের কথাও তাদেরকে জানান।

চতুর বাদশাহ মামুন ইমামের আগমনে তার সকল সভাসদ এবং অন্যান্য লোকজনকে সমবেত করে বলেন, হে লোকেরা ! আমি আব্বাস এবং আলীর বংশধরদের মধ্যে অনুসন্ধান করে দেখেছি, আলী বিন মূসা আর রেযার মতো উত্তম লোক দ্বিতীয় কেউ নেই। তাই আমি চাচ্ছি যে, খেলাফতের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেব এবং এই দায়িত্ব তাঁর ওপর ন্যস্ত করবো ইমাম, মামুনের রাজনৈতিক এই দুরভিসন্ধি সম্পর্কে জানতেন।

তাই তিনি জবাবে বললেন, মহান আল্লাহ যদি খিলাফত তোমার জন্যে নির্ধারিত করে থাকেন, তাহলে তা অন্যকে দান করা উচিত হবে না। আর যদি তুমি আল্লাহর পক্ষ থেকে খেলাফতের অধিকারী না হয়ে থাক, তাহলে আল্লাহর খেলাফতের দায়িত্ব কারো উপর ন্যস্ত করার কোনো অধিকার তোমার নেই।

ইমাম শেষ পর্যন্ত মামুনের কথায় খেলাফতের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করায় মামুন ইমামকে তার ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার হতে বাধ্য করে। ইমাম রেযা (আ) শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে কিছু শর্তসাপেক্ষে তা গ্রহণ করেন। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত ছিল তিনি প্রশাসনিক কোনো দায়িত্ব পালন করবেন না।

তিনি কেন এ ধরণের শর্তারোপ করেছিলেন, তার কারণ দায়িত্ব গ্রহণকালে প্রদত্ত তাঁর মুনাজাত থেকেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি মুনাজাতে বলেছিলেন, হে খোদা ! তুমি ভালো করেই জানো, আমি বাধ্য হয়ে এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। সুতরাং আমাকে এজন্যে পাকড়াও করো না। যেমনিভাবে তুমি ইউসূফ ও দানিয়েল ( আ) কে পাকড়াও করো নি। হে আল্লাহ ! তোমার পক্ষ থেকে কোনো দায়িত্ব ও কর্তব্য ব্যতিত আর কোনো কর্তৃত্ব হতে পারে না। আমি যেন তোমার দ্বীনকে সমুন্নত রাখতে পারি, তোমার নবীর সুন্নতকে যথার্থভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি।...চলবে...

تبصرہ ارسال

You are replying to: .